কিভাবে রাবার চাষ করবেন?
রাবার চাষের উপযোগী ভূমি, আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাতঃ
জলবায়ু, আবহাওয়া ও মাটির গঠনের উপর রাবার চাষের সফলতা নির্ভরশীল। সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ১০০-২০০ মিটার উচ্চতার ভূমি প্রাকৃতিক রাবার চাষের জন্য সর্বাধিক উপযোগী। মাটির গঠণ ৩৫% কাদা ও ৩০% বালি অর্থাৎ বেলে দোঁয়াশ মাটি, মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফেট, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাংগানিজ ইত্যাদি পদার্থ কম বেশি থাকা প্রয়োজন। তাছাড়া ভূপৃষ্ট হতে নীচে অন্ততঃ ১০০সেঃমিঃ পর্যন্ত পাথর স্তর মুক্ত ও পানির স্তর ১০০-১৫০ সেঃমিঃ থাকা উচিত। সারা বছরে গড় বৃষ্টিপাত ২০০-২৫০ সেঃমিঃ এবং গড় তাপমাত্রা ২৫-৩৫ ডিগ্রী সেঃ হওয়া বাঞ্চনীয়। মাটির পি এইচ রেঞ্জ ৪-৫.৫ এর মধ্যে থাকতে হবে। রাবার চাষ এলাকায় পানি জমে থাকতে পারবে না এবং পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। রাবার চাষের জন্য স্থান নির্বাচনের সময় নিম্নবর্ণিত বিষয়ে সঠিক বিবেচনা করা একান্ত প্রয়োজনঃ
(১) মাটি (২) টপোগ্রাফি (৩) বৃষ্টিপাত (৪) পানি নিষ্কাশনের সুবিধা (৫) যাতায়াতের সুবিধা
রাবার চাষের জন্য নির্বাচিত জায়গায় জংগল ও আগাছা খুব ভালভাবে কাটতে/পরিষ্কার করতে হবে। জংগল কাটার কিছুদিন পর জংগল ও আগাছা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এ কাজটি কমপক্ষে দু’বার পুনরাবৃত্তি করা যেতে পারে। জংগল কাটা ও পোড়ানোর পর অবশিষ্ট ষ্ট্যাম্প ও আগাছা ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক ঔষধ নিয়মানুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে ছন এলাকা সমূহ ছন বিনষ্ট করার জন্য নিয়মিত বিরতিতে কমপক্ষে তিনবার গ্লাইফোসেট প্রয়োগ করতে হবে।
বাগান জরিপ ও সীমানা নির্ধারণ ও একর প্রতি চারা রোপনঃ
প্রস্তাবিত বাগান এলাকা সার্বেয়ার দ্বারা জরিপ করতে হবে। ম্যাপে জমির পরিমানসহ বাগান সৃষ্টির যোগ্য/অযোগ্য এলাকা, ডোবা-নালা, ছড়া, ঘরবাড়ি ইত্যাদি প্রদর্শন করতে হবে। বর্তমানে প্রতিএকরে ২২৫টি হারে রাবার চারা রোপন করা হচ্ছে।
নার্সারীর জন্য বীজ সংগ্রহ, জার্মিনেশন বেড ও নার্সারী বেডের স্থান নির্বাচনঃ
ভাল এবং উন্নতমানের নার্সারী সৃষ্টি করতে হলে স্বাস্থ্যবান মাঝারী বয়সের উচ্চফলনশীল ভাল জাতের বাগানের রাবার গাছের বীজ সংগ্রহ করতে হবে। জুলাই-আগষ্ট মাসে সংগৃহীত পাকা বীজ বা ঝড়ে পড়া তাজা/টাটকা বীজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জার্মিনেশন বেডে লাগানো উত্তম। তাজা রাবার বীজ ৪-৫ দিনের মধ্যে শতকরা ৫০% ভাগ আদ্রতা হারিয়ে ফেলে এবং ১০ দিনের মধ্যে প্রায় পুরোটাই শুকিয়ে যায়। এ কারণে বীজ সংগ্রহের পূর্বেই বীজতলা তৈরী করে তাজা বীজ সংগ্রহের পর কালক্ষেপণ না করে জার্মিনেশন বেডে যত তাড়াতাড়ি বসানো যায় ততই ভাল ফল পাওয়া যায়। বিশেষ কোন কারণে জার্মিনেশন বেডে বীজ লাগাতে বিলম্ব হলে ১০০ কেজিতে কেজি সালফার মিশ্রিত করে চটের বস্তায় বা সংগৃহীত বীজ ছিদ্রযুক্ত পলিথিন ব্যাগে ১০% আদ্রতাযুক্ত কাঠের গৃড়ায় (Saw-dust) ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।
জার্মিনেশন বেড (বীজতলা) তৈরীঃ
সমতল জমিতে জার্মিনেশন বেড তৈরী করতে হয়। বেডে ২˝- ৩˝ ইঞ্চি পুরু নদীর বালি খুবই উপযোগী। নদীর বালি না পাওয়ার কারণে মাটি ব্যবহার করা হলে ৬˝ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত সুন্দরভাবে কর্ষন করতে হবে। বেড হতে জংগল, আবর্জনা ও মুড়া অপসারণ করতে হবে। বীজতলার উপর ২´- ৬˝ হতে ৩´- ০˝ উচ্চতার ছাউনি (শেড) দিতে হবে। বীজের চ্যাপটা পাশ নিচের দিকে ৩/৪ অংশ পাশাপাশি এমনভাবে বেডে (বালিতে) বসাতে হবে যাতে করে বীজের উপরের অংশ দৃশ্যমান থাকে। তাজা/টাটকা বীজ বালিতে বপন করলে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে অংকুরিত হয়। মাটিতে বপন করলে ১০-১৪ দিন সময় লাগে। ১৪ দিনের মধ্যে যে সমস্ত বীজ অংকুরিত হয় না, তা পরিত্যাগ করতে হবে। বীজ হতে যখন ভ্রুনমূল বাহির হতে আরম্ভ করবে তখন খুব সতর্কতার সাথে পলিব্যাগ/গ্রাউন্ড নার্সারী বেডে স্থানান্তর করতে হবে। স্থানান্তরের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে অংকুরিত বীজে যেন কোনক্রমেই সূর্যের আলো না লাগে এবং শুক্ষতা না আসে। ভ্রুনমূল নীচের দিক করে অর্থাৎ জার্মিনেশন বেডে যে নিয়মে লাগানো হয়েছিল, সেভাবেই পলিব্যাগ/গ্রাউন্ড নার্সারী বেডে লাগাতে হবে।
নার্সারী বেডের স্থান নির্বাচনঃ
আমাদের দেশে নার্সারী সৃষ্টির উত্তম সময় হচ্ছে জুলাই-আগষ্ট মাস পর্যন্ত। নার্সারী বেডের স্থান নির্বাচনের সময় নিম্নে বর্ণিত বিষয়সমূহের প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
১) স্থানটি সমতল ও উর্বর জমিতে হতে হবে।
২) পানি সেচের ভাল ব্যবস্থা সহ দোঁআশ মাটি হতে হবে।
৩) জমি ভালভাবে কর্ষণ করতে হবে যা চারার বৃদ্ধির জন্য বিরাট সহায়ক (গ্রাউন্ড নার্সারীর ক্ষেত্রে)।
৪) সারা বছর পানি উৎসের নিশ্চয়তা।
৫) স্থানটি বর্ষাকালে যাতে পানিতে ডুবে না যায়।
৬) পানির স্তর কমপক্ষে ৩' ফুটের নীচে থাকতে হবে।
৭) বাগান সৃষ্টির প্রস্তাবিত এলাকার কাছাকাছি বেডে নিয়ম এবং প্রয়োজনমত সার ব্যবহার করতে হবে।
সাধারণতঃ দুই ধরণের নার্সারী সৃজন করা যায় যথা (১) পলিব্যাগ নার্সারী ও (২) গ্রাউন্ড নার্সারী